তিন ফরমেটে প্রথম বাংলাদেশি সেঞ্চুরিয়ান কারা?
এবি ক্রীড়া প্রতিবেদকঅনেক ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে একটি প্রশ্ন জাগে; টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরি করার কৃর্তিত্ব গড়লেন কারা। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক, সেই সফল ক্রিকেট তারকাদের নাম।
২৫ মার্চ, ১৯৯৯ সাল। ইতিহাসে প্রথমবারের মত কোন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরির দেখা পেলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। সেবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন ওপেনার মেহরাব হোসেন অপি। ওয়ানডে ক্রিকেটে সেটাই বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরি। ঠিক এর পরের বছরেই নিজেদের প্রথম টেস্টেই প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিরও দেখা পেয়ে যায় বাংলাদেশ। সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুলের সেই ১৪৫ রানের ইনিংসটা রীতিমত ইতিহাসের পাতায় লেখা হয়ে গেছে।
বাকি ছিল কেবল ক্রিকেটের নতুন সংস্করণ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সেঞ্চুরি। তবে, এবার হল সেই অপেক্ষার অবসান। নিজেদের ৫৮ তম টি-টোয়েন্টিতে এসে অপেক্ষার অবসান ঘটালেন বাংলাদেশের ড্যাসিং ওপেনার তামিম ইকবাল খান। চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ থেকেই তিনি ছিলেন দারুণ ফর্মে। ওমানের বিপক্ষে ধর্মশালাতে যেন তার ব্যাট আরও খানিকটা চড়াও হল। তাতে জ্বলে-পুড়ে ছাড়খাড় হল নবাগত ওমান। ওপেনিং পজিশনে নেমে খেললেন ইনিংসের শেষ বল অবধি। তাতে, ৬৩ বল খেলে করলেন ১০৩ রান। ইনিংসে ছিল ১০ টি চার ও ৫ টি ছক্কা।
সেঞ্চুরি করার পর তামিম জানালেন কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহেকে আগেই বলে রেখেছিলেন, এবারই হবে সেঞ্চুরি। বললেন, ‘আমি কোচকে (চান্দিকা হাতুরুসিংহে) কথা দিয়ে রেখেছিলাম সেঞ্চুরি করবো। আমাদের বলা ছিল, প্রথম তিন জন ব্যাটসম্যানকে লম্বা সময় ধরে ব্যাট করতে। সেটা আমি করতে পেরেছি। তার জন্য অবশ্যই ভাল লাগছে। আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেটের ইতিহাসে এটি ২৫তম সেঞ্চুরির রেকর্ড।
মজার ব্যপার হল এই সেঞ্চুরির সুবাদে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেটে এক হাজার রানের মাইলফলকও স্পর্শ করেছেন তিনি। এছাড়া চলতি বিশ্বকাপে এখন অব্দি সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী ব্যাটসম্যানটিও তামিম ইকবাল। গত তিনটি ম্যাচের একটিতে মাত্র আউট হয়েছেন বাংলাদেশের এই বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান। তাও ২৬ বলে ৪৭ রান করে আউট হয়েছেন। বাকি দুটি ম্যাচের একটিতেও তামিম ইকবালকে সাজঘরের পথ দেখাতে পারেননি প্রতিপক্ষ দলের বোলাররা। বরং প্রতিপক্ষ বোলারদের উপর চড়াও হয়ে ছড়ি ঘুড়িয়েছেন তামিমই। অবিশ্বাস্য ভাবে ৩ ম্যাচে এক সেঞ্চুরি ও এক হাফসেঞ্চুরিতে তার সংগ্রহ ২৩৩ রান। যা এবারের আসরের এখনো পর্যন্ত সর্বোচ্চ স্কোর। তামিমের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ওমানের বিপক্ষে অপরাজিত ১০৩ রান। টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রাহক ব্যাটসম্যান আফগানিস্তানের মোহাম্মদ শাহজাদ। তিনি ৩ ম্যাচে এক হাফসেঞ্চুরিতে সংগ্রহ করেছেন ১৪২ রান। তার সর্বোচ্চ স্কোর ৬১; ব্যাটিং গড় ৪৭.৩৩।
এদিকে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে ছক্কা মারার দিক থেকে রিয়াদকে ছাড়িয়ে গেলেন তামিম। রবিবার ধর্মশালা স্টেডিয়ামে ওমানের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে তামিমের ছক্কা ছিলো ২০টি। অন্যদিকে রিয়াদের ছক্কা ছিলো ২৪টি। এইদিন মোট ৫টি ছক্কা মেরে রিয়াদকে পেছনে ফেলেছেন বাঁহাতি এই ওপেনার। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তামিম ইকবাল ৪৯টি ম্যাচ খেলে এখন পর্যন্ত ২৫টি ছক্কা মেরেছেন। এই ফরমেটে বাংলাদেশের হয়ে ছক্কা মারাতে তৃতীয় অবস্থানে আছেন সাকিব। তিনি ৫০ ম্যাচ খেলে ২৩ ছক্কা মারেন। অন্যদিকে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা হাকিয়েছেন ২১টি ছক্কা!
উল্লেখ্য, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের শেষ ম্যাচে ১৩ মার্চ ওমানের বিপক্ষে দুই উইকেট হারিয়ে ১৮০ রান করে সাকিব-তামিমরা। ১৮০/২ রানের এই ইনিংসটিই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ইনিংস। এর আগে ২০১২ সালে শ্রীলঙ্কার পাল্লেকেলেতে পাকিস্তানের বিপক্ষে করা ১৭৫/৬ রানই ছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ইনিংস। আজ সেটা চলে গেল দ্বিতীয় অবস্থানে। টি-২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের তৃতীয় সেরা ইনিংস হচ্ছে ১৬৫/৪ (২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জোহানেসবার্গে করা।)। এর পরেই আছে ২০০৯ সালে ভারতের বিপক্ষে ট্রেন্ট ব্রিজে করা ১৫৫/৮ রানের ইনিংসটি।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন