বিনোদন মিডিয়ার জনপ্রিয় অভিনেতা, নাট্যনির্দেশক এবং আদর্শিক একজন সংগঠক তিনি। ‘মঞ্চ-টেলিভিশন-চলচ্চিত্র’ তিনক্ষেত্রেই বীরদর্পে পথচললেও তার কাছে মঞ্চই সাচ্ছন্দের জায়গা। বলছি নাট্যজন তারিক আনাম খানের কথা।
দিল্লীর ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায় উচ্চ শিক্ষা নিয়ে পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে তিনি থিয়েটার সংগঠন ‘নাট্যকেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা করেন।
আসছে অক্টোবরেই বর্ণাঢ্য আবহে পালিত হবে নাট্যদলটির ২৫তম বর্ষপূর্তি। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও প্রাসঙ্গিক নানা বিষয়ে আজকের ‘হ্যালো শুনছেন?’ বিভাগে কথা বলেছেন তিনি। যার চুম্বক নির্যাস তুলে ধরছেন- ফারুক হোসেন শিহাব
নাট্যকেন্দ্রের ২৫তম বর্ষপূর্তিকে ঘিরে কি ধরণের আয়োজন থাকছে?
সপ্তাহব্যপী বড়-সড় একটি আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব করার প্রস্তুতি চলছে। যেখানে দেশীয় দলের পাশাপাশি একাধিক বিদেশী নাট্যদলকে রাখার পরিকল্পনা করছি। এজন্য কয়েকটি দলের সাথে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু এখনো চূড়ান্ত হয়নি। নাটক মঞ্চায়ন ছাড়াও নাট্যবিষয়ক আলোচনা-সেমিনার তো থাকবেই।
আয়োজনকে ঘিরে দল থেকে নতুন কোন প্রযোজনা মঞ্চে আনছেন কি?
উৎসবে দলের ব্যানারে ছোট দুটি নাটক আনা হবে। মিসরীয় একজন নাট্যকারের লেখা থেকে নাটক দুটির নাট্যরুপ ও নির্দেশনা দিচ্ছি আমি নিজেই। সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে গড়ে ওঠা দুটি নাম ‘মিসরের বন্দুকযুদ্ধ’ ও ‘গাদার হাট’। আসছে ঈদুল আযহার পরপরই মঞ্চে আসবে বলে প্রত্যাশা করছি।
যে ধরণের আগ্রহ ও বিশ্বাস নিয়ে নাট্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা, বাস্তবতায় তার কতটা প্রতিফলিত হয়েছে বলে মনে করেন?
অদর্শিক এবং শিল্পের ভিন্নতর একটা ভাবনা ও প্রয়োগের প্রয়াসে আমাদের যাত্রাশুরু। আমরা সবসময় চেয়েছি নতুন নাট্যকর্মীদের নিয়ে কাজ করবো। চেয়েছি নাটকের একটা তারুণ্যদীপ্ত প্রজন্ম গড়ে উঠবে। তা আমরা করেছিও। আমাদের অনেক নাট্যকর্মীই এখন বিভিন্ন পর্যায়ে সুপ্রতিষ্ঠিত।
আমাদের নাট্যাঙ্গনের বর্তমান অবস্থাকে কিভাবে দেখছেন?
বিষয় বৈচিত্রতা ও উপস্থাপনার দিক থেকে আমাদের থিয়েটার ভালোই এগিয়েছে। তবে নিরিক্ষার প্রশ্নে আমরা অনেকটা পিছিয়ে আছি। এজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরও আন্তরিক হতে হবে। বিশেষ করে দর্শকদের হৃদয়গ্রাহী হওয়ার মতো প্রযোজনার মধ্য দিয়ে তাদেরকে আরও উৎসাহী করে তুলতে হবে।
আপনি টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক। সংগঠনটির কার্যক্রমে স্থবিরতার কারণ কি?
সত্যিকার অর্থে সংশ্লিষ্ট সবার নানাবিদ ব্যস্ততা এবং চলমান নানান সমস্যার কারণে আমাদের সাংগঠনিক কাজে অনেকটা স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। একটি বড় কারণ হলো আমাদের বিনোদন মিডিয়ায় এক ধরণের গোলমাল চলছে। এটি যদিও খুব তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বস।
এরই মধ্যে আপনি বিকল্পধারার বেশকিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। বাণিজ্যিকধারার চলচ্চিত্রে নিয়মিত হওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ কেমন?
চলচ্চিত্রে কাজ করার ক্ষেত্রে আমি খুবই আগ্রহী। এরই মধ্যে বেশ কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করে সর্বমহলে ব্যপক সাড়াও পেয়েছি। অশ্লীলতাসহ নানা কারণে এর আগে বাণিজ্যিকধারার চলচ্চিত্রে সেভাবে কাজ করিনি। কেননা, আমি সবসময় অপসংস্কৃতি ও অশ্লীলতাবিরোধী। কিন্তু ভালো চলচ্চিত্রেতো অবশ্যই কাজ করবো।
বিনোদন মিডিয়ার সংকটগুলোকে কিভাবে দেখছেন?
আমাদের মঞ্চে দর্শক না বাড়ার মূল কারণই হলো নগরীর অস্বাভাবিক জ্যাম। গুলশান, বনানী কিংবা উত্তরা থেকে একজন দর্শক জ্যামের ভয়েই মানুষ নাটক দেখতে আসেন না। এসব এলাকায় স্থায়ীমঞ্চ নির্মিত হলে সেই সংকট থাকবেনা। পাশাপাশি টিভি মিডিয়ায় অনেকগুলো চ্যনেল হয়ে যাওয়ায় কাজে ও মানে একধরণের বিশৃংখলা দেখা দিয়েছে। অপরদিকে, এটি দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর প্রধান সেলুলয়েড হলো চলচ্চিত্র। এ মাধ্যমটি এখন নানা সংকট-সীমাবদ্ধতায় জর্জরীত। এসব বিষয়ে সরকার এবং এর সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলকে আন্তরিকতার সাথে গভীরভাবে ভাবতে হবে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে একটি চলচ্চিত্রের আয়কে প্রযোজক, পরিবেশক এবং সরকার তিনভাগ করে সমানভাবে নিয়ে থাকে। এর কারণ হলো সরকার সেখানে যথেষ্ট পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে সেই পরিবেশ তৈরি করেছে। আমাদের সরকারকেও প্রেক্ষাগৃহ সংস্কারসহ পরিকল্পিত উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতার মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রশিল্পকে সেই জায়গায় নিয়ে যেতে হবে।