, , No Comments

শুরু হচ্ছে মহিলা সমিতি ও গাইড হাউজ নাট্যমঞ্চের কার্যক্রম

Logoআপডেট: বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪
শিহাব ফারুক
বাংলাদেশের নাট্য সংস্কৃতির গোড়াপত্তন হয়েছিল বেইলীরোডস্থ নাটক স্বরণীখ্যাত মহিলা সমিতি ও গাইড হাউজ নাট্যমঞ্চে চর্চার মধ্যদিয়ে। যেখান থেকে হাজারো নাট্যপুষ্প প্রস্ফুটিত হয়েছিল।
আজকে যারা মঞ্চ বা টিভিমিডিয়ায় জনপ্রিয় তারকা, তাদের অধিকাংশই নাটক স্বরণীর ফসল। স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশে প্রথম দর্শনীর বিনীময়ে নাটক মঞ্চায়ন শুরু হয় মহিলা সমিতির নাট্যমঞ্চ থেকেই।

দীর্ঘ দিনের জরাজীর্ণ ঐতিহ্যবাহী মহিলা সমিতি মিলনায়তন ও নিকটবর্তী গাইড হাউজ নানা সমস্যায় জর্জরীত থাকা সত্ত্বেও অনবদ্য নাট্যচর্চা চলে আসছিল বহু দিন ধরে।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী তথা জাতীয় নাট্যশালা হওয়ার পর থেকে নাটকের দলগুলো শিল্পকলাকেন্দ্রিক নাট্যচর্চায় ঝুঁকে পড়ে। এতে করে থিয়েটার চর্চার এই শেকড়স্থানটি মঞ্চ অব্যবস্থাপনা-বৈদ্যুতিক ত্রুটি-শব্দ বিভ্রাট এমনকি দর্শক সংকটে নিভু-নিভু হয়ে পড়ে।

দীর্ঘ সময় অতিক্রমের পর এমনি ত্রুটিপূর্ণতার কারণে যখন নাট্যদলগুলো বিড়ম্বিত হয়ে নাটকস্বরণী থেকে চূড়ান্তভাবে মুখ পিরিয়ে নিচ্ছিল তেমনি এক পরিবেশে কতৃপক্ষের টনক নড়ে। অতঃপর ২০১১’র শেষের দিকে এই মঞ্চটিকে আধুনিকায়নের জন্য ভবনটি ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যার প্রেক্ষিতে মহিলা সমিতি কর্তপক্ষ মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় একটি সুবিশাল কমপ্লেক্স ভবন নির্মানের সিদ্ধান্তে উপনীত হয়।

ভবনের পরিকল্পনায় মহিলা সমিতির কার্যালয়, তিন শতাধিক আসনবিশিষ্ট একটি আধুনিক নাট্যমঞ্চ ও নিজস্ব স্টুডিও থিয়েটার হল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। তারই আলোকে সকল নাট্যসংগঠন ও নাট্যজনদের স্মৃতিবিজড়িত এই মঞ্চটি ভেঙ্গে ফেলার পূর্বে ৮-১২ সেপ্টেম্বর-২০১১ বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান শেষবারের মতো এ মঞ্চে আয়োজন করে ‘ভাঙ্গাগড়া নাট্যোৎসব-২০১১’। এর পরপরই শুরু হয় নতুন ভবনের কাজ। যার ফলশ্রুতিতে কখনও মন্থর আবার কখনও বা দ্রুতগতিতে হয়ে অবশেষে সম্পন্ন হয়েছে নির্মাণ কাজ। 

অতঃপর নাট্যপ্রেমীদের তীব্র প্রতিক্ষার প্রহর ফেরিয়ে শেষ হলো বাংলা নাটকের চিত্তভূমি বাংলাদেশ মহিলা সমিতির নবনির্মিত কমপ্লেক্সের কাজ। নতুন এই কমপ্লেক্স নিয়ে নাটক সংশ্নিষ্ট মানুষের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক কৌতুহল। 

এদিকে সংস্কারের মাধ্যমে গাইড হাউজেও করা হয়েছে আধুনিকায়ন। আসছে ঈদের পরপরই একযোগে চালু হতে যাচ্ছে মঞ্চদুটি। তবে নতুন আঙ্গিকে মঞ্চদুটির কার্যক্রম চালু হলেও নাটকস্বরণী অতীতের সেই জৌলস ও প্রাণবন্ত মূখরতা ফিরে পাবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। তবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা বেশ আশাবাদী। 

অবশ্য, সেই ঐতিহ্যময় পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে মিলনায়তন দুটির ভাড়া নাট্যদলগুলোর অনুকূলে রাখাসহ বিশেষ বিশেষ আয়োজনের উদ্যোগ নিতে হবে বলে মনে করছেন নাটকের রথি-মহারথিরা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের এসোসিয়েট সেক্রেটারী চন্দন রেজা বলেন, ‘ভবনটির ডিজাইন হওয়ার পূর্বে মহিলা সমিতি কর্তৃপক্ষ ফেডারেশনের সাথে বসেছিল।

উভয় প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলদের পরিকল্পনা মোতাবেক ভবনটির ডিজাইন অনুমোদন পেয়েছে। সে মোতাবেকই কাজ হয়েছে। এদিকে গাইড হাউজকেও আধুনিকায়ন করা হয়েছে। তবে আমরা আশা করবো মিলনায়তন দুটির ভাড়া যেন নাট্যদলগুলোর সামর্থের মধ্যে থাকে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে আন্তরিকতার সাথেই দেখতে হবে। 

তিনি বলেন, মহিলা সমিতি ও গাইড হাউজ মিলনায়তনকে ঘিরে খুব দ্রুতই থিয়েটার চর্চার সুতিকাগার খ্যাত নাটকস্বরণী আবারও নাটকের প্রতিধ্বনীতে প্রাণ ফিরে পাবে বলে আমরা প্রত্যাশী। তবে ফেডারেশন যেমনি ‘ভাঙ্গাগড়া নাট্যোৎসব’ দিয়ে পুরাতন মিলনায়তনের কার্যক্রমের ইতি টেনেছিল তেমনি আরেকটি উৎসব দিয়েই নতুন মিলনায়তনের শুভ সূচনা করতে প্রস্তুত।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন